ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

পেকুয়ায় কাজি নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

20170219_174659-1নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় দূর্নীতির মহোৎসবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিকাহ রেজিষ্ট্রার। উপজেলার ৬ইউনিয়নে কাজি নিয়োগ হয়েছে। চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ কমিটি এসব ইউনিয়নের জন্য নিকাহ রেজিষ্ট্রার নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ওই নিয়োগ বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি। তবে কাজি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে অনেকটা গোপনীয়তার মাধ্যমে। মুসলিম নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজি নিয়োগে যে সব নীতিমালা রয়েছে সেগুলোর অনুসৃত হয়নি নিয়োগের বেলায়। অনেকটা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এ নিয়োগে। কাজি নিয়োগের পূর্বে বিজ্ঞপ্তি করা হয়নি প্রকাশ ও প্রচার। নীতিমালায় স্পষ্ট আছে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে কাজি নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি প্যানেল গঠনের কথা। কাজি নিয়োগে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হন স্থানীয় সাংসদ। সদস্য সচিব থাকেন সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্ট্রার। প্যানেলে নিয়োগ কমিটিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন সদস্য। অপরদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করন বাধ্য বাধকতা অত্যাবশ্যক। কিন্তু পেকুয়া উপজেলায় যে ৬ইউনিয়নে মুসলিম নিকাহ রেজিষ্ট্রার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে এসবের প্রতিফলিত হয়নি। জানা গেছে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পেকুয়ায় ছয় ইউনিয়নে কাজি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এসব ইউনিয়নের মধ্যে ৩ইউনিয়নে সাবেক নিকাহ রেজিষ্ট্রারের তিন ছেলে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা ঠিকানা সম্পূর্ন গোপন রেখে পৃথক ইউনিয়নে কাজি পদটি ভাগিয়ে নিয়েছেন। জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আই ডি কার্ডে নিয়োগকৃত ইউনিয়নের বাসিন্দা নন। এরপরেও নিয়োগে একই পরিবারের এ ৩জনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ পাইয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজি মোশারফ হোসনের ৩ছেলে কাজি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। মগনামা ইউনিয়নে নিয়োগ পান কাজি মোশারফের ছেলে ছাআদাতুল ইসলাম। তার লাইসেন্স স্মারক নং- বিচার-৭/২ এন ১৫-২০০০-৭৩৭, তারিখ ২৬-১২-২০১৬ইং। ঠিকানা কাজি পাড়া, মগনামা। তার অপর ছেলে শাহাদাতুল ইসলাম, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের কাজি পদে নিয়োগ হাতিয়ে নিয়েছেন। লাইসেন্স নং- ৭৩৬। তার ঠিকানা দেয়া হয়েছে সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া। তার অপর ছেলে শরাফাতুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বারবাকিয়া ইউনিয়নে। লাইসেন্স নং- ৭৪০। তার ঠিকানা দেয়া হয়েছে বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা। শিলখালী ইউনিয়নের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বারবাকিয়ার বাসিন্দাকে। এ ইউনিয়নে কাজি¦ নিয়োগ পেয়েছেন ওয়াহিদুর রহমান। লাইসেন্স নং-৭৩৯। তিনি বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার নুরুন্নবীর ছেলে। ভুঁয়া ঠিকানা দিয়েছে শিলখালী ইউনিয়নের দক্ষিন জুম। রাজাখালী ইউনিয়নে নিয়োগ পেয়েছেন একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফিরাজ আহমদ কাজি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজাখালী ইউনিয়নে। লাইসেন্স নং-৭৩৮। তিনি রাজাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। উজানটিয়া ইউনিয়নে নিয়োগ পেয়েছে হাবিব উল্লাহ জাহাঙ্গীর। লাইসেন্স নং-৭৪১। শিলখালী ইউনিয়নের নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিও সরকারি চাকুরীজীবি। নীতিমালায় ষ্পষ্ট উল্লেখ আছে মুসলিম নিকাহ রেজিষ্টার নিয়োগে সরকারি কোন চাকুরি জীবি নিয়োগ প্রাপ্ত হতে পারবেনা। অথচ ছয় ইউনিয়নের তিন ইউনিয়নে নিয়োগ প্রাপ্ত কাজি সরকারি চাকুরীজীবি। কাজি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ কমিটিকে দুষছেন। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম প্রত্যায়ন আকারে বলেছেন নিয়োগ কমিটিতে প্যানেল গঠিত হয়নি। পেকুয়া সদরের কাজি নিয়োগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রত্যায়ন প্রকাশ করে। ষ্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে সদর ইউনিয়নে নিয়োগকৃত কাজি এ ইউনিয়নের বাসিন্দা নয়। একইভাবে বারবাকিয়া ইউপি ও শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যানগন কাজি নিয়ে তাদের ধারনা পোষন করেছেন। তারাও জানিয়েছেন নিয়োগকৃত কাজি তাদের ইউনিয়নের বাসিন্দা নয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু গত ২৩ ফেব্রুয়ারী এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মতামত লিখিতভাবে ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন কাজি নিয়োগে প্যানেল গঠিত হয়নি। নিয়োগ চুড়ান্ত হলেও এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কোন মতামত নেয়নি। এদিকে কাজি নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছেন উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার। নিয়োগ চুড়ান্ত হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে নিয়োগকৃতদের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত কোন অবিকল কপি পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়েরএকজন জৈষ্ট্য কর্মকর্তা জানান সব ডকুমেন্ট এমপি মহোদয়ের কাছে। তিনি আদেশ না দেয়ায় এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছুই নেই। সংরক্ষন ফাইলও নেই। মগনামা ইউনিয়নের লোকজন জানিয়েছেন কাজি মোশারফ জামাত রাজনীতির অনুসারী। দেশ বিভক্তির সময় তার পিতা কাজি আবুল হাসেম সরাসরি পাকিস্তান অনুচর ছিলেন। সে সময় আ’লীগকে নির্যাতন চালান। ওই সময় কাজি মোশারফ একটি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তিনিও পাকিস্তানীদের গুপ্তচর ছিলেন। ভুঁয়া ঠিকানা ও অর্থ দিয়ে তার তিন ছেলেকে তিন ইউনিয়নে কাজি নিয়োগ পেয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কাজি নিয়োগ কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ হাজি¦ মুহাম্মদ ইলিয়াছ জানান এসব আমার বিষয় নয়। আপনারা যেভাবে লিখতে চান লিখেন। আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সাব-রেজিষ্ট্রার এ বিষয়ে জানে। তিনি না জানলে দস্তখত দিলেন কিভাবে।

###################

পেকুয়ায় ইউপি সদস্যের গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা, আটক-১

পেকুয়া প্রতিনিধি :::

পেকুয়ায় সাবেক এক ইউপি সদস্যসহ দু’জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আহতদের মধ্যে একজনকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। পেকুয়া থানা পুলিশ একজনকে আটক করে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমকুল এলাকায়। আহতরা হলেন ওই ইউনিয়নের সিকদার পাড়া এলাকার রুহুল আমিন চৌধুরীর ছেলে আদনান চৌধুরী (৩৭) ও মগনামা ইউপির সাবেক সদস্য পশ্চিমকুল এলাকার মৃত মৌলভী সোলতান আহমদের ছেলে জাকের উল্লাহ (৩৮)। আটককৃত মৌলানা আবু তালেব জাকের উল্লাহ’র বড় ভাই বলে জানা গেছে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে আদনান ও জাকের উল্লাহ মেম্বারের মধ্যে মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়। সিকদার পাড়া ষ্টেশনে জাকের উল্লাহ’র কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবি জোর করে নিয়ে নেয় আদনান। জাকের উল্লাহ এর প্রতিবাদ করলে আদনান ও তার ভাই আদিব ইউপি সদস্যকে মারধর করে। বিষয়টি জাকের উল্লাহ’র গ্রামবাসিরা জানার পর উত্তেজিত হন। মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আদনানকে নিয়ে রাত ৯টার দিকে পশ্চিমকুল গ্রামে যান। এ সময় উত্তেজিত লোকজন আদনানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সাতঘর পাড়া ও পশ্চিমকুল গ্রামবাসিদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পশ্চিমকুল গ্রামবাসিরা এ নিয়ে বৈঠক করে। তারা সাতঘর পাড়ার বিএনপির ক্যাডারদের নেপত্যে থেকে যারা প্ররোচিত করছে তাদের প্রতিহতের ঘোষনা দেয়। এ ব্যাপারে পশ্চিমকুল এলাকার সোলতান আহমদ বাদশাহ, হাজি মুফিজুর রহমান জানায় আমরা অনেক দিন ধরে নির্যাতন হচ্ছি। মুখ খোলার সাহস ছিলনা। তারা সব সময় আমাদেরকে প্রজা মনে করেন। আমরা সোচ্ছার হতে বাধ্য হয়েছি। জাকের উল্লাহ মেম্বারের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমরা এ জন্য প্রতিবাদ মুখর হয়েছি। আবু তালেব নির্দোষ। তার পিতা একজন বড় আলেম। ওসি এজাহার ছাড়া তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা জেনেছি তাকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে পুলিশ। টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। এখন মামলার ভয়ে পুরুষ শুন্য হয়েছে গ্রাম। সাবেক ইউপি সদস্য জাকের উল্লাহ জানান আদনান আমার মোটর সাইকেল ছিনতাই করার চেষ্টা করছিল। তার বাড়ির গেইটের সামনে আমাকে মারধর করে। পরে সন্ত্রাসীদের নিয়ে পশ্চিমকুলে আক্রমনের চেষ্টা করে। গ্রামবাসিরা ধাওয়া দিয়েছে। আমার কাছ থেকে মুঠোফোন ও ৭৫হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে আদনান ও আদিব।

পাঠকের মতামত: